অস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদা দাবি, ছোড়েন গুলি

ddddddddd

একটি নির্মাণাধীন ভবনের ফটকের সামনে টমটম থেকে নামেন তিন অস্ত্রধারী। তিনজনেরই রয়েছে মুখে মাস্ক। নেতৃত্বে দেখা গেছে শটগান হাতে এক যুবককে। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও দুজন, তাঁদের হাতেও অস্ত্র। ঢোকার মুখে তাঁরা ভবনটির নিরাপত্তাকর্মীকে অস্ত্র তাক করেন। একপর্যায়ে ভবনমালিকদের খুঁজতে খুঁজতে গুলি ছুড়তে থাকেন।

প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজির এমন ঘটনা গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার। চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রধারী এই দলে শটগান হাতে থাকা যুবকটির নাম সাজ্জাদ হোসেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মো. হাছান; আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। এই দুজন তাঁর সহযোগী। ভবনটির সিসিটিভির ফুটেজে ধারণ করা ভিডিওতে অস্ত্রবাজির ঘটনাটি ধরা পড়ে।

ddddddddd
প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে চাঁদা নিতে আসেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামের কালারপুল এলাকায়।ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের চাহিদামতো পাঁচ লাখ টাকার চাঁদা না দেওয়ায় অস্ত্র হাতে নিয়ে গিয়ে কৈফিয়ত চান। স্থানীয় লোকজন পুলিশকে ভিডিওটি দিলেও ভবনমালিকদের কেউ ভয়ে কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না। এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলাও হয়নি। পুলিশ সব জানলেও তাঁকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তাঁর চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।

সাজ্জাদ হোসেন
সাজ্জাদ হোসেন

বিদেশে পলাতক জামায়াত-শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী হিসেবে এই সাজ্জাদ অপরাধজগতে পা রাখেন। এরপর দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। শেষ গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান তিনি।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার সদ্য বিদায়ী ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ খুবই হিংস্র প্রকৃতির। ভাড়াটে খুনি হিসেবে যেকোনো কাজই করতে পারেন।

চাঁদা না পেলেই গুলি

পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। বাধ্য হয়ে তাঁকে দিয়ে দেন চাহিদামতো চাঁদা। ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার ওই নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন। ৬০ জন মিলে ভবনটি নির্মাণ করছেন। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ভবনমালিকদের সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।

এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে। ঘটনার ভুক্তভোগী মো. ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় সাজ্জাদ আমার বাড়িতে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন।’ এ ঘটনায় ইকবাল বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন।

চাঁদা না পেয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসায়ও গুলি করেন সাজ্জাদ। গত বছরের ২৭ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর দলবল নিয়ে। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জোড়া খুনেও সাজ্জাদ

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা-সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় গত ২৯ আগস্ট প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। দুটিতে সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীদের আসামি করা হয়।

আসামিরা ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান নিহত মাসুদ কায়সারের ভাই মো. আরিফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। এ কারণে এলাকায় একের পর এক ঘটনা ঘটছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *